
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ,২৭ অক্টোবর
অসময়ে গত এক সপ্তাহ ধরে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী,পুরাতন ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদী তীরবর্তী এলাকায় আবাও দেখা দিয়েছে ভাঙন।সরকারি ভাবে দ্রæত ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না নিলে বসতবাড়ি, ফসলী জমি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেকোনো সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কার্তিক মাসে অসময়ের পানি বৃদ্ধি ও ভাঙনে নদী তীরে ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে ভিটামাটি হারা মানুষের সারি।ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
দেখা গেছে,উপজেলার কুশুন্ডা এলাকায় পাকা রাস্তা পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে।প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পাকা সড়কের একপাশে ফাটল ধরেছে।ইদিমধ্যে এই সড়কের বিশাল অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোন সময় এই রাস্তার অর্ধ কিলোমিটার পুরোপুরি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে ঘিওর উপজেলায় ভাঙনে নদী গর্ভে চলে গেছে প্রায় অর্ধশত বসতভিটা, ব্রিজ, কালভার্ট, ফসলি জমি,শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর গরুর হাটসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা।এছাড়া ঘিওর সদর ইউনিয়নের পঞ্চরাস্তা এলাকায় পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর উত্তর পাড়ে ভাঙন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।ইতিমধ্যে কমপক্ষে ১৫টি বসত বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নদী ভাঙনে।এই নদীর ভাঙনে শ্রীধরনগর, কুস্তা, মাইলাগী, ঘিওর পূর্বপাড়া, ঘিওর নদীর উত্তর পারের বাজার এবং ব্রিজসহ ১২ টি প্রতিষ্ঠান হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভয়াবহ হুমকীর মধ্যে রয়েছে উপজেলা সরকারী খাদ্য গুদাম ও মহা শ্মশান।
অপর দিকে ইছামতি শাখা নদীর ভাঙনের শিকার বড় রামকান্তপুর- কুঠিবাড়ি এলাকার ২৬ টি পরিবার। এই নদীর ভাঙনে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর গরুর হাট অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকীর মধ্যে রয়েছে কুস্তা কফিল উদ্দিন দরজি উচ্চ বিদ্যালয়, কুস্তাা ব্রিজ, ঘিওর- গোলাপনগরের রাস্তা,বেপারীপাড়া কবরস্থান,রসুলপুর গ্রাম ও কবরস্থান, বেপারীপাড়া কবরস্থানটি হুমকির মধ্যে রয়েছে।
এদিকে কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে ১ কিমি. কাঁচা রাস্তা ও ১৫ টি বসতবাড়ি। এই নদীর ভাঙনের হুমকিতে আছে আরো অর্ধ শতাধিক বসতভিটা, বানিয়াজুরী ইউনিয়ের তরা রমজান আলী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা, তরা শ্মশানঘাট ও মন্দির,একটি বাজার, মির্জাপুর এলাকার রাস্তা, জাবরা নদীর উত্তর পাড়ের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও বসত ভিটা।
ভাঙনের শিকার জাবরা গ্রামের মো: আজিম মিয়া বলেন,কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনে আমার ২ বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।প্রতি বছরই ভাঙনের শিকার হতে হয় আমাদের।অসময়ে নতুন করে ভাঙনে আমার মতো আরো অনেকেই ফসলী জমি হারাচ্ছেন।
ইছামতি নদীর ভাঙনের শিকার মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, ছেলে মেয়ে নিয়ে সব সময় আতংকে থাকি। সারারাত এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারিনা। কখন যেন নদীতে সব নিয়ে যায়। আমাদের বসত বাড়ি ভাঙন রোধে সরকারের সহযোগিতা চাই।
ঘিওর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল জানান,অসময়ে নদীতেপানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।বড় রামকান্তপুর- কুঠিবাড়ি এলাকায় ইছামতি শাখা নদীর ভাঙন আতংকে রয়েছে কমপক্ষে ২৫ টি পরিবার। আর ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাঈন উদ্দিন বলেন,সাড়ে আট হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে। আর কুস্তা বেইলী ব্রিজ রক্ষায় গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। পানির প্রবাহ কমে গেলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়ার ভাঙ্গনরোধে তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ধলেশ্বরী নদী পূর্ন খনন কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে।