জ. ই. আকাশ, হরিরানপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে :
জন্মগতভাবে দুটো হাতই বিকলঙ্গ নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভাব ঘটে কবিরের। পুরো নাম মো. কবির হোসেন। গরীব অসহায় পরিবারে বেড়ে উঠা এই প্রতিবন্ধী কবির হোসেন ১৯৯০ সালের ৩রা মে জন্ম গ্রহণ করেন মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের সাতানি গ্রামে। বাবা আব্দুস ছাত্তার। পেশায় একজন শুটকি মাছ ব্যবসায়ী। বর্তমানে বিভিন্ন হাটবাজারে শুটকি মাছ বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। তেমন কোনো জমিজমা নেই তার। মাত্র আড়াই শতাংশের ওপর বসত বাড়িটিই একমাত্র সম্বল। আব্দুস ছাত্তার তিন পুত্র সন্তানের জনক। তিন সন্তানের মধ্যে কবির হোসেন সবার বড়। মেঝ ছেলে মামুন হোসেন এলাকায় অটো বাইক চালান। ছোট ছেলে মনির হােসেন ঢাকার একটি ছাপাখানায় কাজ করেন। দুটো হাত বিকলাঙ্গ নিয়েই জীবন জীবিকার তাগিদে কবির যেন কোনো কাজেই পিছু হটেননি। বিকলাঙ্গ হাত নিয়েই দর্শন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন অদম্য মেধাবী এই কবির হোসেন। জানা যায়, ২০০৭ সালে বলড়া মুন্নু আদর্শ উচ্চ বিদ্যা নিকেতন থেকে এসএসসি, ২০১০ সালে খাবাশপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি ও ২০১৩ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন মেধাবী প্রতিবন্ধী কবির হোসেন। পরবর্তীতে সে ২০১৬ সালে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ হতে দর্শন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পারিবারিকভাবে আরও জানা যায়, অর্থের অভাবে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন হাটবাজারে বাদাম বিক্রি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন কবির হোসেন। পড়া শোনার পাঠ চুকিয়ে চাকুরি খোঁজার পাশাপাশি করেছেন টিউশনি। সরকারি বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠানে করেছেন চাকুরির আবেদন। কিন্তু তাতে মিলেনি চাকরি নামক সোনার হরিণ। চেষ্টা করেছেন প্রতিবন্ধী কোঠায় সরকারি চাকরিরও। কিন্তু সঠিক তদবীরের অভাবে সেটাও জোটেনি কবিরের ভাগ্যে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ে টিউশনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে বাজারে বাবার সাথে শুটকি মাছের ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন বর্তমান দুই সন্তানের জনক এই প্রতিবন্ধী কবির হোসেন। ২০১৪ সালে শিউলী বেগমকে বিয়ে করে বৈবাহিক জীবনে পদার্পণ করেন তিনি। সরেজমিনে তার বাড়িতে গেলে একান্ত আলাপকালে কবির হোসেন জানান, “আমরা খুব গরীব। জন্ম থেকেই সৃষ্টিকর্তা আমাকে পুঙ্গ করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছে। অনেক অবহেলার মধ্য দিয়ে আমাকে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। পড়াশোনার খরচ যোগাতে স্কুল জীবন থেকেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করতাম৷ ফেরি করে বাদামও বিক্রি করেছি। পরে কলেজে উঠে টিউশনি করে কোনোরকমে চলেছি। মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। ডিগ্রি শেষ করেই আমি চাকুরির জন্য আবেদন করতে থাকি। কিন্তু কোনোভাবেই চাকরি না হওয়ায় বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করছি। তবে দুই হাত বিকলাঙ্গ হলেও মোটামুটি সকল কাজই করতে পারি।” কবিরের বাবা আব্দুস ছাত্তার জানান, “জন্মগতভাবেই দুটি হাতই বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম গ্রহণ ছেলেটি। স্কুলে পড়াশোনা করানো নিয়ে অনেক বিপাকে পরতে কবিরকে নিয়ে। তবে মেধা ছিল। ছোটবেলা থেকেই অভাবের সাথে সংগ্রাম করে বড় হয়েছে। আমি গরীব মানুষ। আড়াই শতাংশের এই ভিটে বাড়ি ছাড়া আমার কিছু নেই। বাদাম বিক্রি করে টিউশনি ছেলেটি মাস্টার্স শেষ করেছে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও একটা তাই ওর হলো না।সরকারিভাবে অনেক কোঠা ভিত্তিক চাকুরি হয়। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ওর জন্য কিছু করতে পারলাম না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *