আবুল বাসার আব্বাসী,মানিকগঞ্জ ঃ ২১ এপ্রিল
কৃষি জমি সংকটের অন্যতম কারন হচ্ছে নদী ভাংগন।আর জলবায়ূ পরিবর্তনের কারনেই নদীতে ভাংগ দেখাদেয়।জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট নদী ভাংগনে মানুষের কৃষি জমি, ভিটেমাটি,স্থানীয় সংস্কৃতি, প্রাণ-প্রকৃতির পাশাপাশি মানিকগঞ্জের বুক থেকে ১৩ জাতের স্থানীয় আমন ধানের জাত হারিয়ে গেছে। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বারসিক মানিকগঞ্জের বেতিলা মিতরা ইউনিনের সৈয়দপুর গ্রামে মাঠ পর্যায়ে এক অনুসন্ধান মূলক সমীক্ষাকালে এলাকাবাসী এসব কথা বলেন। সমীক্ষায় গ্রামটির ৫০ বছর পূর্ব হতে বর্তমান পর্যন্ত তুলনামূলক তথ্য,কৃষি জমির সংকটের রুপ ও সমাধানে করনীয় বিষয়সমুহ সম্পর্কে আলোচনা করাহয়।
স্বরেজমিনে গেলে সৈয়দপুর গ্রামের মৃত শাহাবুদ্দিনের ছেলে মোঃ আলাউদ্দীন (৭০) জানান, পঞ্চাশ বছর আগে (১৯৭১ সালে) এই অঞ্চলে আউশ আমন সহ ২৩ জাতের ধান,তিল ও কাউনের চাষ হত। বর্তমানে ০৫ জাতের ধান চাষ হয়। এলাকাবাসির দেয়া তথ্যমতে, ১৯৭০ সালে কৃষি পরিবার ১৭ বিঘা জমি চাষের আওতায় ছিল।বর্তমানে তা ০৪ বিঘায় নেমে এসেছে।ফলে কৃষিজমির সংকট দেখা দিয়েছে।
সৈয়দপুর গ্রামের মোঃ আবেদ আলী (৭৩) জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীতে যখন পানির স্রোত ও চাপ বেশি থাকে তখন নদীতে ভাংগন দেখাদেয়। জলবায়ুর পরির্বতনের কারনে উত্তরের বরফগলা পানি,উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং সমতলে অতিবৃষ্টি হয়। এতে কৃষি জমির ব্যাপক খতি হয়ে থাকে। কাজেই কৃষি জমির সংকট নিরসনে সরকারের নীতিমালা সংশোধন ও যথাযথ ভাবে তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে এলাকাবাসি মনে করেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে বিপ্র বেতিলা ১৪ নং ব্লকে সৈয়দপুর গ্রামটি অবস্থিত। মোট জমির পরিমান ৩৭ হেক্টর। বসত বাড়ি ১০ হেঃ ফসলি, জমি ২৫ হেঃ, পতিত জমির পরিমান ০২ হেঃ যা নদীগর্ভে রয়েছে। এ অঞ্চলে এক ফসলী জমির পরিমান ০২ হেঃ এতে শুধু কলার চাষ হয়। দুই ফসলী জমি রয়েছে ০৩ হেঃ আখ ও সবজীর আবাদ হয়ে থাকে এবং ২০ হেঃ তিন ফসলী জমিতে সরিষা,বোরোধান ও সবজীর চাষ হয়ে থাকে। বাকী ০২ হে জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
উপ সহকরী কৃষি কর্মকর্তা বদর উদ্দিন আহাম্মদ জানন, গ্রামটির বুকচিরে কালীগঙ্গা নদী প্রভাহিত হওয়ায় গ্রমটি দুইভাগে বিভক্ত। ১৯৭১ সালের পর গ্রামটি থেকে আনুমানিক ০৫ হেক্টর ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে কৃষি জমি কমেগেছে। নদী ভাংগন, নতুন নতুন বাড়ীঘর ও রাস্তাঘাট নির্মান হওয়াই কৃষি জমি কমে যাওয়ার মুলকারন বলে তিনি জানান ।

মুক্তিযুদ্ধাকালীন সময়ের কথা জান্তে চাইলে এলাকার প্রবীন মানুষ মোঃ মিনহাজ উদ্দিন জানান,সৈয়দপুর গ্রামের বুকচিরে বয়ে যাওয়া কালিঙ্গগা নদী মুক্তি যুদ্ধের এক ইতিহাস ধারন করে আছে। যুদ্ধ চালাকালীন সময়ে এ নদী দিয়ে ভেসে গেছে হাতে পায়ে পেরেক মারা অবস্থায় কতশত লাশ। স্থানীয়দের ধারনা,দূর দূরান্ত হতে পাক বাহিনী ও রাজাকাররা তাদেরকে মেরে এ নদীদিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে। মিনহাজ উদ্দিন বলেন,মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে তিনি একদিন বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের আইরমারা গ্রাম হতে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরছিলেন। সৈয়দপুর খেয়াঘাটের একটু আগেই দেখেন পাকসেনারা ভানু পাটনী নামে এক খেয়া নৌকার মাঝিকে গুলি করে মেরে বটগাছের নিচে ফেলে রেখেছে। সে কথা মনে হলে আজো তার গাশিহরিয়া উঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *