সিংগাইর প্রতিনিধি।।
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সৌদি প্রবাসী পুত্রের স্ত্রী রুনা বেগমের পরকিয়া প্রেমিক সবুজ মিয়া আধ্যাত্মিক হুজুরের বেশে নিয়ে রুনার শাশুড়ীকে হত্যা করে গুম করার উদ্দেশ্যে বাক্সের ভেতর লাশ লুকিয়ে রাখে। পরকিয়া প্রেমে বাঁধা ও পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রেমিক সবুজের সহায়তায় শাশুড়ি হায়াতুন নেছাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সিন্দুকে রেখে দেওয়া হয়। এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যের নায়ক পরকিয়া প্রেমিক সবুজকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ২২ অক্টোবর ঢাকার কাফরুল থানা
এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেছে সিংগাইর থানার পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত সবুজের বাড়ীর টাংগাইল জেলার গোপালপুর থানার শ্যামনগর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয় বলে জানা গেছে । সুত্রমতে, পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদ (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নাতিপ্রাপ্ত)এর দিক নির্দেশনায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) সুজন সরকারের এর তথ্য প্রযুক্তিগত সহায়তায়, সিংগাইর সার্কেল সিনিয়র এএসপি মোঃ নাজমুল হাসান এবং সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশের পাঠানোর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আসামী সবুজকে ২দিনের পুলিশ রিমান্ডে গত শুক্রবার আসামী সবুজ মিয়া স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে বলেন, মূলত হত্যাকাণ্ডের শিকার শাশুড়ীর জন্য তার পরকীয়া প্রেমিকা রুণার সাথে মিলিত হতে পারত না।
ঘটনার দিন সবুজ রুনাকে বলে তার কাছে থাকা অদৃশ্য আধ্যাতিক হুজুর সন্ধ্যায় সবুজের রুপ ধরে রুণার শাশুড়ীকে বোতলবন্দী করতে যাবে।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানকালে সবুজ জানায়, হুজুররুপী সবুজ সন্ধ্যায় রুণার বাড়িতে পৌছালে রুণা কলাপ্সিবল গেট খুলে দেয়। সবুজ ভেতরে ঢুকে শাশুড়ি আয়াতুনকে মেঝেতে বসা অবস্থায় পায় এবং পেছন থেকে নাকসহ মুখ সজোরে চেপে ধরে। এভাবে আনুমানিক ৫ মিনিট চেপে ধরে রাখলে আয়াতুন খাতুন নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে সবুজ লাশ গুম করার জন্য একই ঘরে থাকা স্টিলের বাক্সের মধ্যে লাশ লুকিয়ে ফেলে তালা মেরে দেয়। পরবর্তীতে সবুজ পাশের ঘরে থাকা প্রেমিকা রুনাকে বলে আমি(আধ্যাতিক হুজুর) তোমার শাশুড়ীকে বোতল বন্দীকরে নিয়ে যাচ্ছি, কিচ্ছুক্ষণ পরে তোমার প্রেমিক সবুজ আসবে বলে চলে যায়। পরবর্তীতে সবুজ আবার এসে তার প্রেমিকার সাথে রাত্রিযাপন করে।
উল্লেখ, ৭ অক্টোবর রোববার রাত সাড়ে ৭টার দিকে তার নিজ বাড়ির শয়ন কক্ষের সিন্দুকের ভিতর থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় রুনা ও তার মা রেনুকা বেগমকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল হাসপাতাল লাশ পাঠানো হয়েছে। নিহত হায়াতুন নেছা (৬৫) ওই উপজেলার পৌর এলাকায় নয়াডাঙ্গী গ্রামের মাহামুদ কাজীর স্ত্রী। এ ঘটনায় পুত্রবধূ রুনা বেগম ও ছেলের শাশুড়িকে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। নিহতের ভাতিজা মোঃ নিয়ামদ বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর আসামীর স্বিকারোক্তিমুলক জবাবনবন্দিতে হত্যার ঘটনার দায় ও পরিকল্পনার কথা স্বিকার করেছে বলে জানান।