ফলো আপ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ ২৭ জুলাই
মানিকগঞ্জে আলোচিত বিয়ের তিন মাসের মধ্যে স্ত্রী সুমি আক্তারকে জবাই করে হত্যা মামলার আসামী রূপককে সিআইডি পুলিশ সাত দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। সেই সাথে সিআইডি পুলিশের কাছে হত্যার কারণ উল্লেখ্য করেছে অভিযুক্ত নিহতের স্বামী রূপক। স্ত্রীর চাকুরি নিয়ে বিরোধের জেরেই এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মনির হোসেন সমকালকে বলেন বিয়ের তিন মাসের মাথায় দাম্পত্য কলহের জেরে নববধ‚কে হত্যার ঘটনাটি দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়। হত্যার ঘটনার বিষয়ে ভিকটিম সুমি আক্তারের বাবা মো. রহম আলী নিহতের স্বামী রূপককে একমাত্র আসামি করে মানিকগঞ্জের ঘিওর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত রূপকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। ২৬ জুলাই ঘিওর থানার মামলটি সিআইডিতে নিয়ে আসা হয়। গতকাল বুধবার সকালে এলআইসির একটি চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে আসামী রূপককে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বুধবার দুপুরে সিআইডির মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান আসামী রূপকের (২৮) এর সাথে বিয়ের সময় কথা ছিল সুমি আক্তার বিয়ের পরও চাকরি করবে। কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর পরিবারের সদস্যদের মত পাল্টে যায়। চাকরি ছাড়ার বিষয়টি ছাড়াও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুমির উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। ‘সুমি আক্তারের চাকরি ছাড়ায় বিষয়টি এরই মধ্যে সে অফিসে জানিয়েছে বলে তার শ্বশুর বাড়ির লোকদের জানায়। অফিস তার বিকল্প দক্ষ কর্মী খুঁজছে। তাই বিকল্প না পাওয়া পর্যন্ত তাকে চাকরি না ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেছে অফিসের পক্ষ থেকে । চাকরি ছাড়ার বিষয়টি ছাড়াও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিকটিম সুমি আক্তারের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো।’ এরই ধারাবাহিকতায় ২১ জুলাই সকালে চাকরি ছাড়ার বিষয় নিয়ে স্বামী রূপকের সঙ্গে সুমির কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রূপক সুমিকে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে ধারালো দা দিয়ে গলায় কোপ দেন। এতে সুমি আক্তার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে দ্রæত পালিয়ে যায় রূপক।
সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর আরো জানান গ্রেপ্তরকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জজ কোর্টে অ্যাডভোকেটের সহকারী হিসেবে সে প্রায় ৯ বছর ধরে কাজ করতো। উভয় পরিবারের সম্মতিতে গত ১৫ মে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে থেকেই ভিকটিম সুমি আক্তার স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থ্য এসডিআই এ মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতো। সুুমির চাকরি ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে রূপকের সাথে ২১ জুলাই সকাল টা থেকে ১০টা ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আসামি রূপক সুমি আক্তারকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকলে রূপকের মা রওশন আরা বেগম রূপককে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু রূপক আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে ঘরে থাকা ধারালো দা দিয়ে সুমির গলায় কোপ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করলে সুমি আক্তার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
সুমি আক্তারের চাকরি নিয়ে সৃষ্ট দাম্পত্য কলহের জেরে নববধ‚কে অত্যন্ত নির্মমভাবে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় একমাত্র এজাহারনামীয় আসামিকে দ্রæততম সময়ে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার সিআইডি তথা বাংলাদেশ পুলিশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন বলেও জানান সিআইডির ওই কর্মকর্তা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মনির হোসেন আরো জানান, মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেষে আসামি রূপককে মানিকগঞ্জ সিআইডির কাছে হসন্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আসামিকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বৃস্পতিবার আসামিকে কোর্টে প্রেরণ করা হবে। তিনি আরো জানান আসামী রূপকের মা রওশনআর বর্তমানে তার এক আত্মীয় বাড়িতে রয়েছেন জানা গেছে।