
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি১,৩ জুন
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চর বেউথা এলাকায় দারুল আবরার ইসলামীয়া মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম নিজের দখলে রেখে অনুদানের টাকার হিসাব না দেওয়ারসহ টাকা সরানোর অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার মুহতামিম (পরিচালক) আহসান হাবীরের বিরুদ্ধে। ওই মাদ্রাসা ছাত্রদের বেতন ও প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক অনুদানের টাকা যৌথ ব্যাংক হিসাবে না রেখে ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে রাখতেন বলে অভিযোগ করেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আবদুল ওয়াদুদ খান।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের চর বেউথা এলাকায় দারুল আবরার আল ইসলামীয়া মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠাতা আবদুল ওয়াদুদ খান তিন বছর মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় জেলা সদর হাসপাতালের ঈমাম আহসান হাবীরের সঙ্গে তার ভালো সক্ষতা থাকায় মাঝে মধ্যেই মাদ্রাসা যাতায়াত করতেন। পরে ২০১৫ সালের দিকে মৌখিকভাবে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করার জন্য আহসান হাবীবকে দায়িত্ব দেন এবং ছাত্রদের দ্বীনিশিক্ষা, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও স্টাফ এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখনে। মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি হওয়ায় জায়গা সম্প্রসারণের জন্য ২০১৯ সালের জমি ক্রয়ের জন্য পরিচালকের কাছে টাকা চান ওয়াদুদ। তবে টাকা দিতে গড়িমশি করলেও পরিচালকের কাছে আয়-ব্যয়ের সমস্ত হিসাব চাওয়ার পর থেকে পরিচালকের সঙ্গে ওয়াদুদ খানের মধ্যে বিরোধে শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিকবার বসা হলেও কোন সুফল পাননি প্রতিষ্ঠাতা ওয়াদুদ। পরে মাদ্রাসার ছাত্রদের শিক্ষার কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য স্থানীয় ও ছাত্রদের অভিভাবকদের নিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর কিছুদিন পরে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি গঠন করা। কিন্তু ওই কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা আবদুল ওয়াদুদকে কোন পদে বা দায়িত্বে না রাখায় ন্যায় বিচারের আশা পরিচালক আহসান হাবীরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরের লিখিত অভিযোগ দেন। বর্তমান ৩০০ বেশি ছাত্র ওই মাদ্রাসা দ্বীনি শিক্ষায় অধ্যায়নরত আছে। মাসিক বেতন হিসেবে প্রত্যেক ছাত্র তিন হাজার ৫০০ টাকা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আদায় করছে। তবে প্রায় ৫০ জনের মত ছাত্র রয়েছে যাদের কাছ থেকে কোন বেতন বা ফ্রি নেওয়া হয় না।
স্থানীয়রা জানান, আবদুল ওয়াদুদ নিজের জমির ওপরে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওই সময় ১৮ মাস মাদ্রাসার শিক্ষদের নিজ অর্থায়নের বেতন দিয়েছেন তিনিসহ তার এক বন্ধু। আমরা দেখেছি, মাদ্রাসাটিকে কত কষ্ঠ করে পরিচালনা করেছেন। কিন্তু বর্তমান পরিচালক আহসান হাবীব মাদ্রাসার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ভালো ভাবেই সব চলছিল। তার কাছে মাদ্রাসার ফান্ডের টাকার হিসাব চাওয়ার পর থেকেই ওয়াদুদ সাহেবের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। মাদ্রাসার পরিচালক আহসান হাবীব একজন ঈমাম এবং শুনেছি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ঈমাম হয়ে এতো টাকা কোথায় পেলেন যে, এক কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে জয়নগ এলাকায় আরেকটি মাদ্রাসার নামের জয়াগা কিনেন। এ ছাড়াও মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি বেরসকারি হাসপাতালে তার শেয়ার(মালিকানা) আছে, পৌরসুপার মার্কেটে ১১ লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকানও কিনেছেন।
পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও চর বেউথা দারুল আবরার আল ইসলামীয়া মাদ্রাসার পরিচালানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু নাহিদ জানান,‘মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আবদুল ওয়াদুদ ও পরিচালক আহসান হাবীদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। মাদ্রসার জমিজমা ও অনুদানের টাকা পয়সা নিয়েই একে ওপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছেন। তবে তাদের দুজনের মধ্যেকার বিরোধ নিয়ে একাধিকবার সমঝোতার জন্য বসা হলেও কোন সুরাহা হয়নি। মাদ্রাসার অনুদানের টাকা হিসাব আমাদের দেওয়া হয়নি এবং আমরা দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সময় মাদ্রাসার ব্যাংক হিসাব শূন্য ছিল। এ কারনে পরিচালক মাদ্রাসার কোন টাকা পয়সা অন্যত্র সরিয়েছেন কি না তা সঠিক বলতে পারছি না।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আবদুর ওয়াদুদ খান জানান,‘আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিজের জমিতে উপার্জিত কষ্টের টাকায় মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠতা করেছি। প্রতিষ্ঠার তিন বছর পরে(২০১৫সালে) মৌখিকভাবে আহসান হাবীব হুজুরকে পরিচালনার দায়িত্ব দেই। তিনি এই সুযোগে মাদ্রাসার নামের আসার অনুদানের টাকা যৌথ ব্যাংক হিসাবে (ইসলামী ব্যাংক মানিকগঞ্জ শাখা) না রেখে নিজের ব্যাংক হিসাবে রাখেন। এর পর মাদ্রাসার জায়গা সম্প্রসারণের জন্য ২০১৯ সালে তার কাছে টাকা চাই এবং দীর্ঘ ৫ বছরের সমস্ত আয়-ব্যয়ের হিসাবও চাওয়া হয়। তবে এক মাসের সময় নিয়েও আজ পর্যন্ত তিনি কোন হিসাব দেননি।
তিনি আরো জানান, হিসাব চাওয়ায় পরিচালক আহসান হাবীব আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেন ও মাদ্রাসা তার নামে লিখিতভাবে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ ছাড়া তিনি আগের সকল শিক্ষক ও স্টাফদের ছাটাই করে তার অনুগত শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগ দিয়েছেন। যাতে করে তার এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে না পারে। মাদ্রাসার ছাত্রদের ভবিষ্যত ও প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতির জন্য পরিচালকের নিকট থেকে হিসাব গ্রহণ এবং পরিচালককে প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন প্রতিষ্ঠাতা আবদুল ওয়াদুদ খান।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালক আহসান হাবীব জানান, মাদ্রাসা ফান্ডের কোন টাকা লোপাট বা সরানো হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, মাদ্রাসাটি আবদুল ওয়াদুদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে মাদ্রাসা পরিচালানা দায়িত্ব আমি পালন করছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়ে তা মিথ্যা। জয়নগর এলাকায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে আরেকটি মাদ্রাসার জমি নিজ নামে ক্রয় ও পৌরসুপার মার্টেকেটে দোকানের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে একটি বেরসকারি হাসপাতালে শেয়ার রয়েছে বলে জানান।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।