মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি,১৩ মে

 

মানিকগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে আয়োজিত প্রশিক্ষণের স্যান্ডুইচ খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, প্রশিক্ষক, আয়োজক, সহযোগি কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা  পড়েছেন। তাঁরা ঢাকা ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিজবাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৮ মে প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বনফুলের স্যান্ডুইচ খেয়েই  তাঁরা অসুস্থ হয়েছেন বলে জানান তাঁরা।

 

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার রিসোর্স সেন্টার অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক এবং একজন সহকারি শিক্ষককে ‘একীভূতকরণের কৌশল শিখন শেখানো এবং মূল্যায়ন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচী শুরু হয়েছে। প্রতিটি ব্যাচে ৩০জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব ও সেওতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার আখিঁ। প্রশিক্ষণের তত্ত্ববধানে ছিলেন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্স্ট্রাক্টর কলপনা রাণী মন্ডল। এই কাজে সহযোগিতা করেন সেন্টারের কর্মচারীরা। প্রশিক্ষন চলাকালীন সকালে ও বিকেলে খাবার নাস্তা দেওয়া হয়। এই নাস্তা কেনাটাকার দায়িত্বও পালন করেন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা। গত ৪ মে শুরু হওয়া ৫ম ব্যাচের প্রশিক্ষনের সমাপনী দিন ৮ মে বিকেলে নাস্তা হিসেবে সন্দেশ, কলা ও বনফুলের কেক দেওয়া হয়। যারা স্যান্ডুইচ খেয়েছেন তাঁরা সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁরা ঢাকা ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিজবাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ৮৮ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান বিশ্বাস, সেওতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার আখিঁ, মত্ত বাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রীণা মন্ডল, পশ্চিম দাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সামছুন নাহার ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব স্যান্ডুইচটি তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে। তাঁদের সকলকে বিছানায় কাতর অবস্থায় দেখা গেছে।

 

৮৮ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন নিজে স্যান্ডুইচ না খাইয়ে বাড়ির লোকজনকে খাইয়েছেন। তাঁরা অনুস্থ হননি অথচ বাড়ির লোকজন অসুস্থ হয়েছেন। এতে প্রমাণ হয় যে স্যান্ডুইচ খেয়েই সবাই অসুস্থ হয়েছেন। বনফুলে মতো এতো নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা আশা করি না।’

 

প্রশিক্ষকের দায়িত্বে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব বলেন, ‘প্রশিক্ষের জন্য আনা স্যান্ডুইচটি আমি বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর আমার স্ত্রী আয়েশা আক্তার খেয়ে রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে বাসায় রেখে চিকিৎসা দিয়েছি। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় আজ তাঁকে  মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটে ভর্তি করেছি। ‘

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্স্ট্রাক্টর কল্পনা রাণী মন্ডল ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সদর উপজেলার মত্ত বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ নুরুল ইসলাম জানান,তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিরভ কুমার অসুস্থ হয়ে এখনো  চিকিৎসাধীন রয়েছে।

 

৯০ নং জাহিদ মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলন বিশ্বাস বলেন, ’আমাকে দেওয়া  স্যান্ডুইচটি আমি না খেয়ে আমার বাসায় নিয়ে যাই। সেই স্যান্ডুইচটি আমার মেয়ে- মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ বিনা ঘোষ এবং নাতি-নাতনী খায়। এরপর তাঁরা সবাই অসুস্থ মুন্নু মেডিকেল কজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীরন রয়েছেন।’

 

দক্ষিণ চৈল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলেয়া বেগম বাসায় নিয়ে তাঁর মা ও ছেলেকে খাওয়ানোর পর তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা নিজ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটের জ্যেষ্ঠ নার্সিং কর্মকর্তা রেশমী আক্তার বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এখন পাঁচজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তাঁরাও পর্যায়ক্রমে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। স্যালআইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধসহ আমরা সাধ্যমত তাঁদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে তাঁদের সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে। ‘

 

বনফুল মানিকগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক বলেন, মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, ‘৮ মে শিক্ষকরা আমাদের কাছ থেকে ৫০টি স্যান্ডুইচ নিয়েছিলেন। সেই সেন্ডুইচ খেয়ে সকলেই অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমিও আমাদের উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের এবিষয়ে অবহিত করেছি। বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।

 

এদিকে, মানিকগঞ্জের শিক্ষকসহ সচেতন নাগরিকেরা এব্যাপারে বনফুল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবী করেছেন।

 

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা শাখার  সাধারণ সম্পাদক রোজিনা মাহমুদ বলেন, ‘অসুস্থ সকলকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বনফুল কর্তুপক্ষের গাফিলতির জন্যেই আজ এতোগুলো মানুষ অনুস্থ হয়ে পড়েছে। অবশ্যই বনফুল কর্তুপক্ষকের এর দায়িত্ব নিতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *