মো.রকিবুল হাসান বিশ্বাস,সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)থেকে:

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা হলেও এটি আসলে রাজধানী শহর ঢাকার উপকন্ঠ। এ উপজেলার যে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ড জাতীয় পর্যায়ের নেত্রীবৃন্দকেও ভাবিয়ে তোলে। দীর্ঘ ৭ বছর পর সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ।

আর এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সমগ্র উপজেলায় সাধারন জনগন ও নেতাকর্মীদের মধ্যে বয়ছে আলোচনা -সমালোচনার ঝড়। পোষ্টার-ব্যানার, ফেষ্টুন ও ফেইসবুকে চলছে প্রচার- প্রচারণা। চারদিকে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব।এ দিকে, সভাপতি মমতাজ বেগম এমপি চুড়ান্ত হলেও সাধারন জনগনও নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে কে পাবে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব। ইতি মধ্যে এ উপজেলার বিভিন্ন গুরুতপূর্ন স্থান ছেয়ে গেছে পদ প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থিত নেতাকর্মীদের ছবি যুক্ত পোষ্টার, ব্যানার ও ফেষ্টুনে। প্রধান সড়কে নির্মাণ করা হচ্ছে বাহারী ডিজাইনের তোরণ ।

দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতাদের নজরে আসতে চলছে নানা ধরনের লবিং। সম্মেলনের কাউন্সিলরদের সমর্থন পেতে পদ প্রত্যাশীরা বিভিন্নভাবে তাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে চলছেন। আগামী কমিটিতে সভাপতি পদে অন্য প্রার্থী না থাকায় এমপি মমতাজ বেগম নিরাপদ স্থানে থাকলেও চুলছেড়া বিশ্লেষণ চলছে সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন। এ পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল মাজেদ খান, সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহিদ ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো: সায়েদুল ইসলাম কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের ৬ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল মাজেদ খান একই পদে ২৭ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবারও তিনি তার অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন।

এদিকে নেতাকর্মীদের অনেকেরই ধারণা সাঃ সম্পাদক পদে শক্ত অবস্থান রয়েছেন শহিদুর রহমান শহিদ। শহিদ ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপিও ছিলেন। উপজেলা ও জেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামীলীগের কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অপরদিকে এ পদে অপর প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী সায়েদুল ইসলাম। তিনি ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা হিসেবে সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে চলছেন। এতে তিনিও শক্ত অবস্থায় মাঠে রয়েছেন নেতাকর্মীরা জানান। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী শহিদুর রহমান শহিদ বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দল আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছিল।

প্রার্থীদ্বয় আব্দুল মাজেদ খান ও মো: সায়েদুল ইসলাম দু’জনই নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মুশফিকুর রহমান খান হান্নানের আনারস মার্কায় কাজ করেছেন। এরা প্রকৃত পক্ষে নৌকার লোক না। দলীয় বিরোধীতার কারণেই বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান তিনি। অপরদিকে, মাজেদ খান ও সায়েদুলের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃর্নমূল আঃলীগের নেতা কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা শহিদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় তার ভরাডুবী হয়েছে। এতে আমাদের কিছুই করার ছিলনা। আমরা নৌকার লোক। নির্বাচনের আগে আমাদের মিথ্যা মামলায় আসামী করায় আমরা ব্যক্তি শহিদের বিরোধীতা করেছি মাত্র , দলের নয়। এদিকে সভাপতি পদে অন্য কোন প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী না থাকায় গত বারের মতই এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সভাপতি হতে যাচ্ছেন মমতাজ বেগম এমপি। এছাড়া সকল পর্যায়ে নেতা কর্মী এবং কাউন্সিলররাও তাকেই সভাপতি হিসেবে চাচ্ছেন

। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন,দলের কোন্দল এড়াতে সমযোতার মাধমে বর্তমান সভাপতি এমপি মমতাজ বেগম যদি সাঃ সম্পাদক পদে পদ প্রত্যাশীদের সঙ্গে বসে যে কোন দু’জনকে সম্মানজনক চেয়ার দিয়ে অপর একজনকে সাধারণ সম্পাদক করেন তাহলে সবচাইতে ভালো হবে। এতে করে দলের বিভাজন হবে না এবং আগামী নির্বাচনে তার জন্যও ভাল দিক হবে। অন্যথায় সিংগাইরে দলীয় কোন্দল আরো প্রকট হতে পারে। প্রভাব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় মমতাজ বেগম বলেন, সম্মেলন বড় কথা নয়, কমিটিও বড় কথা নয়। নিজেদের সঠিক পথে থাকতে হবে এবং কিভাবে শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আপনারা নৌকার জন্য কা্জ করে যাবেন। এটাই হবে বড় কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *