
জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে :
ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে টানা ৪৪ বছর পর হারমানলেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদ প্রার্থী বাবু সুভাষ চন্দ্র ভদ্র। তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একাধারে ৪৪ বছর ধরে ৮ বার ইউনিয়নটির ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য পদে নির্বাচিত হন। শুধু তাই-ই নয়, সদস্য পদে জয়লাভ করে তিনি ৫ বার প্যানেল চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেন।
জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে নিজ দলের কয়েকজন লোকের বিরোধিতার কারণে পরাজিত হয়েছেন। সুভাষ চন্দ্র ভদ্র ডেগিরচর গ্রামের মৃত সতীশ চন্দ্র ভদ্রের তৃতীয় ছেলে। তিনি ১৯৭৩ সালে ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ থেকে আই এ পাস করেন। ৪৪ বছর মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দুই ভাই ভরতে চলে যান। ষাটের দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনে বাপদাদার ভিটেবাড়িসহ প্রায় ২০০ বিঘা জমিজমা পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। প্রায় ২০-২৫ বছর আগে ডেগিরচর গ্রামে বসবাস করেন।
একাম্ত আলাপচারিতায় সুভাষ ভদ্র জানান, “স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় আমার দুই ভাই ভারতে চলে যান। আমার এক ভাই আমাকে ভালবেসে আমার সাথে এখানেই থেকে যান। আমার সেই ভাই এখন পর্যন্ত বিয়ে করেননি। তিনি নিজে দেশ আর এলাকার মানুষকে ভালবেসে এদেশেই থেকে গেছেন। ৪৪ বছরের মেম্বার জীবনে কোনো রকম দুর্নীতি করার চিন্তাও করিনি। যতটুকু পেরেছি মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা করার চেষ্টা করেছি।”
তিনি আরও জানান, “আমি ছাত্র জীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে অতোপ্রোতভাবে জড়িত। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তিনবার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়াও রামকৃষ্ণপুর এম এ জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দুবার নির্বাচিত সদস্য ছিলাম।”
সুভাষ ভদ্রের স্ত্রী বলেন, তিনি ৪৪ বছর মেম্বার থাকলেও নিজের জন্য কিছুই করেননি। যার কারণে এখনো আমরা ভাঙা ঘরে থাকি। আমার স্বামী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হলেও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কয়েকজন বিরোধিতা করায় তিনি হেরে যান।
উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সুভাষ চন্দ্র ভদ্র আপেল প্রতীকে ভোট পান ১৩২ এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী শহিদুর রহমান পান ১৬০ ভোট। মাত্র ২৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে ৪৪ বছরের মেম্বার জীবনের অবসান ঘটে ৭৫ বছর বয়সী সুভাষ চন্দ্র ভদ্রের।