জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে :
মাহফুজুর রহমান খান। তৎকালীন স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অকুতোভয় দুঃসাহসিক সৈনিকের নাম। যিনি এই দেশমাতৃকার জন্য ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। বিনিময়ে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার তাকে চতুর্থ সর্বোচ্চ উপাধি বীর প্রতীকে ভূষিত করেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযু্দ্ধে অসামান্য অবদান ও বীরত্ব প্রদর্শন এবং সাহসিকতার জন্য ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ৪২৬ জন শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। তার মধ্যে হরিরামপুরের সূর্য সন্তান শহীদ মাহফুজুর রহমান খান অন্যতম।
মানিকগঞ্জ জেলার পদ্মা অধ্যুষিত হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের পিপুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন এই বীর প্রতীক খেতাবী মাহফুজুর রহমান খান। বাবা মৃত জিয়াউল হক, মা মৃত শামছুন্নাহার খানম। ৪ বোন ১ ভাইয়ের মধ্য বাবার মায়ের ২য় সন্তান ছিলেন তিনি। পারিবারিক আাদি নিবাস উপজেলার আজিমনগর হলেও পদ্মা ভাঙনের কবলে পড়ে পরবর্তীতে তাঁর পূর্ব পুরুষ বাড়ি করেন দোহারের সাইনপুকুর এলাকার ফুলতলা গ্রামে। কিন্তু মাহফুজ শৈশবকাল থেকেই বেড়ে ওঠেন হরিরামপুরের পিপুলিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে। জন্ম তারিখটা কেউ সঠিকভাবে বলতে না পারলেও ২০১১ সালের প্রদত্ত জন্মসনদ অনুযায়ী ১৯৫২ সালের ১৪ আগষ্ট তিনি পিপুলিয়া গ্রামে জম্মগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর হরিরামপুরের লেছড়াগঞ্জের হরিণা রণাঙ্গনে গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে ১৬ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ।
মাহফুজুর রহমান খানের জন্মস্থান পিপুলিয়া গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, অগোছালো এক বিশাল বাড়ি। প্রথম দর্শনেই মনে হয়েছিল, এটি একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। কিন্তু একটু এগিয়ে যেতেই নজরে পড়ে পুরোনো দেয়ালে সাদা রঙ করা টিন শেটের বড় আকারের একটি ঘর। তার পাশেই রয়েছে জরাজীর্ণ টিনের আরেকটি চৌচালা ঘর। তবে এ ঘরের বেড়াগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা। চালের পুরোনো টিনগুলোও বেশ আঁকাবাঁকা। একটুখানি বৃষ্টি হলেই পুরোনো এই টিনের চাল ভেদ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। এমন জরাজীর্ণ ঘরেই বাস করেন বীর প্রতীক মাহফুজের ছোট বোন শামীমা খানম। এই ঘরটির সাথেই রয়েছে একটি ছোট্ট ঝুপরি ঘর। ঘরের বেড়ায় লাগানো রয়েছে মাহফুজুর রহমানের পরিচিতির একটি অাধো ভাঙা সাইনবোর্ড। তাতে বাবা মায়ের নাম পরিষ্কার বোঝা গেলেও তার জন্ম ও মৃত্যু তারিখের জায়গাটুকু অনেকটা ভেঙে যাওয়ার কারণে বোঝার উপায় নেই। এই বাড়িতে মাহফুজের ছোট বোন ও ভগ্নিপতি থাকলেও বড় তিন বোন মারুফা খানম, শাহানা খানম ও ঝিনু খানম থাকেন ঢাকায়।
দেশমাতৃকার জন্য জীবন বিসর্জনকারী বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত এমন একজন বীর সন্তানের বাড়ির বেহাল দশা দেখে অবাক হবে না, এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই হওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, বিজয়ের ৫০ বছরেও এই বীর প্রতীক খেতাবী শহীদের সম্মানে হরিরামপুরে নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা কোনো স্থাপত্যের ফলক। ফলে এমন একজন বীর প্রতীকের কথাও হরিরামপুরের বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না। আর যারা তার সম্পর্কে জানেন, তারাও কখনও কোনো জাতীয় দিবসে মাহফুজ সম্পর্কে অতীত এবং বর্তমানেও আলোচনায় আনেননি। ফলে এমন একজন বীর সৈনিকের নাম অনেকের কাছেই রয়েছে অজানা এবং অচেনা । এছাড়াও তিনি যে বাড়িটিতে বসবাস করতেন, সে বাড়িটিও আজ সম্পূর্ণ অরক্ষিত, অযত্ন ও অবহেলায় রয়েছে। যে বাড়ি থেকে শৈশব, কৈশোর ও তারণ্যের সোনালী দিনগুলো অতিবাহিত করে টগবগে যৌবনের উন্মাদনায় এই দেশ, দেশের মানচিত্র, লাল সবুজের পতাকা ও বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন দুঃসাহসিক এই মাহফুজুর রহমান বীর প্রতীক।
তাঁর সেই জরাজীর্ণ বাড়িতে যেতেই এগিয়ে আসেন ছোটবোন শামীমা খানম। মাহফুজ সম্পর্কে জানতে চাইলেই তিনি হাউমাউ করে দুচোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, “আমি আমার ভাইকে দেখিনি। এই দেশের জন্য আমার ভাই জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার এতো বছর পার হয়ে গেল কিন্তু এই বাড়িটির আর কেউ খোঁজখবর রাখে না।”
স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর লেখা একাত্তরের বীরযোদ্ধা খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ড ও স্থানীয় প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা যায়, মাহফুজুর রহমান খান ১৯৭১ সালে জয়দেবপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে কর্মরত ছিলেন। শ্রমিক রাজনীতিতেও তাঁর ছিল সক্রিয় ভূমিকা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ভারতে যান। সেখানে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টরে। পরে তিনি চলে আসেন নিজ জন্মস্থান মানিকগঞ্জে।
১৯৭১ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের হরিরামপুরের লেছড়াগঞ্জের হরিণায় সিও কার্যালয়ে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। এ ক্যাম্পে ছিল নিয়মিত সেনা, ইপিআর, ইপিসিএএফ ও রাজাকার। সব মিলিয়ে প্রতিটি ক্যাম্পে ছিল শতাধিক লোকবলের একটি মিশ্র বাহিনী। তবে ইপিআরে বেশির ভাগ ছিল বাঙালি।
৭১’ র ১৩ অক্টোবর মাহফুজুর রহমান খানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা হরিরামপুরের লেছড়াগঞ্জের হরিণায় সিও কার্যালয় আক্রমণ করেন। সেদিন বিকেল চারটার দিকে ওয়্যারলেস অফিস থেকে কাঠের সেতু এলাকার মধ্যে রাস্তার পূর্ব পাশে অবস্থান নেন মাহফুজুর রহমান খানসহ প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। মুখোমুখি যুদ্ধের একপর্যায়ে ওয়্যারলেস স্টেশনে থাকা পাকিস্তানি সেনারা সিও অফিসের মূল ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। তখন মাহফুজুর রহমান খানসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ওয়্যারলেস অফিস ধ্বংস করতে যান। এ সময় পাকিস্তানি সেনারা সেখানে গ্রেনেড ছোড়ে। গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। সেই আগুনের লেলিহানে পুরো শরীর ঝলসে যায় মাহফুজুর রহমান খান ও বজলুর হুদা ওরফে পান্নুর। মাহফুজুর রহমান খান গুরুতর আহত হন। ওখান থেকে সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে নেন। পরবর্তীতে ২দিন পর ১৬ অক্টোবর তার জীবন প্রদীপ নিভে যায়। তবে বেঁচে যান বজলুল হক পান্নু।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান খান বীর প্রতীক’কে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র৷ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের মেধাবী মুখ উদ্ভিদপ্রেমী ওয়াটার লিলি ও লোটাস গার্ডেনের স্বত্ত্বাধিকারী তানভীর আহমেদ জানান, “মাহফুজুর রহমান খান আমাদের গর্ব ও অহংকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ৭১’ র এই বীর সৈনিকের নামে হরিরামপুরে কোনো স্মৃতি স্তম্ভ নেই। তাই আমি সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিকট দাবি করছি, শহীদ মাহফুজের স্মৃতিকে অক্ষুণ্ন রাখতে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে তার পিপুলিয়ার বাড়িটিতে মাহফুজের নামে নামকরণ করে একটি মিনি জাদুঘর কাম পাঠাগার নির্মাণ করা হোক।”
পাটগ্রাম অনাথবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্র মুনশী সোহাগ বলেন, “বাঙালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান
রাখায় আমাদের হরিরামপুরের পিপুলিয়া গ্রামের মাহফুজুর রহমান খানকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। অথচ যার নাম বর্তমান প্রজন্মের কাছে অনেকটাই ম্লান। তাই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সেই বিরত্বগাঁথার স্মৃতি বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে এবং সেই চেতনায় দেশ গড়তে আরো বেশি কাজ হওয়া দরকার। আমাদের হরিরামপুরের গর্ব, মাহফুজুর রহমান খান বীর প্রতীকের বীরত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে হরিরামপুরে স্মৃতি ফলক নির্মাণ করার দাবি করছি।”
উপজেলার পাটগ্রাম অনাথবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও নিসর্গসহ বিভিন্ন সামাজিক উদ্দীপনামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করছেন; এমন একজন সংগঠক তৈয়বুল আজহার জানান, “হরিরামপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শহীদ মাহফুজুর রহমান, বীর প্রতীক অনন্য একটি নাম। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর আত্মত্যাগ, দেশপ্রেমিক মানুষদের যুগে যুগে অনুপ্রেরণা যোগাবে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে, বিশেষ করে হরিরামপুরে আমার জানা মতে, তাঁর আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে অদ্যাবধি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ আমরা নির্মাণ করতে পারিনি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির এ সূর্য সন্তানের স্মরণে হরিরামপুরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হবে, তরুণ প্রজন্ম এমনটাই দাবি জানায়।”
মানিকগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব ইঞ্জি. মামুন চৌধুরী বলেন, “আমাদের দূর্ভাগ্য যে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখনও এনপ্রজন্মের নিকট পৌঁছে দিতে পারিনি। জেলার অধিকাংশ মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অকুতোভয় মুক্তিসেনা, বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত শহীদ মাহফুজুর রহমান খানের নামই হয়তো জানেনা। আমি মনে করি, এটি এই অঞ্চলের সচেতন ব্যক্তিদের ব্যর্থতা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও তারা এই বিষয় নিয়ে তেমন কোনো কাজ করেননি। ফলে এ অঞ্চলের প্রজন্মের কাছে মাহফুজুর রহমান খানের নাম অজ্ঞাতই রয়ে গেছে। এটা মানিকগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত লজ্জাস্কর ব্যাপার। তাই আমি মনে করি, এই বীর প্রতীকের হরিরামপুরের বাড়িটি সংরক্ষণ পূর্বক সেখানে একটি মিনি জাদুঘর তৈরি করে শহীদ মাহফুজসহ হরিরামপুর তথা জেলার অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।”
মানিকগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এ্যাডভোকেট মীর হাবিবুর রহমানের মেয়ে এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নির্বাহী সদস্য মৃদুলা রহমান নীলু স্মৃতিচারণ করে বলেন, “ধুলশুড়া ভবানীনগর আমাদের মীরের বাড়িতে দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিলো। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ ভাই মুক্তিযোদ্ধাদের পুরো দলসহ আমাদের বাড়ির বাংলা ঘরে থাকতেন। ওই দুঃসময়ে তাদের খাবারের ব্যবস্থাও আমাদের বাড়িতেই ছিলো। আমি তখন ছোট ছিলাম। তবুও তখনকার মাহফুজ ভাইয়ের দীপ্ত চেহারাখানি আমার চোখে এখনও ভেসে ওঠে, যা কখনই ভুলাবার নয়। পাক বাহিনী যখন সুতালড়ী, আজিমনগর ও ধুলশুড়া আক্রমণ করে, তখন মাহফুজ ভাইয়ের হাতে অস্ত্র, লুঙ্গী গুটানো, কাদামাটি মাখানো সেই চেহারাটি আজও আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। হরিণা সিও অফিসের ক্যাম্প আক্রমণের পর মাহফুজ ভাইয়ের মৃত্যুর সেই বেদনাবিধুর স্মৃতি মনে পড়লে আজও আমার গা শিউড়ে ওঠে। সেই স্মৃতি বিজড়িত মুহূর্তের কথা আজও আমাকে কাঁদায়। স্বাধীনতার ৫০ বছরের এই লগ্নে এসে বীর প্রতীক মাহফুজ ভাইকে নিজ জন্মস্থান হরিরামপুর তথা মানিকগঞ্জে অবহেলিত দেখলে অনেক কষ্ট লাগে। তাই আমি সরকারি উচ্চ পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে অনুরোধ জানাব, আমার হরিরামপুরের অহংকার ও গর্ব এই সূর্য সন্তান বীর প্রতীককে বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য এই হরিরামপুরে তার নামে যেকোনো নির্দশন স্থাপন করা হোক।”
হরিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ হাসান ইমাম বাবু স্মৃতিচারণে বলেন, “মাহফুজ ছিলেন অত্যন্ত সাহসী এবং সম্মুখ মুক্তিযোদ্ধা। তৎকালিন হরিরামপুরের লেছড়াগঞ্জের হরিণায় এক উল্লেখযোগ্য অপারেশনে তিনি শহীদ হন। কিন্তু তার নামে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও হরিরামপুরে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ হয়নি। তাই আমি সদ্য নির্মিত বালিরটেক কালিগঙ্গা নদীর ওপর যে ব্রীজটি করা হয়েছে, মাহফুজের নামে সেই ব্রীজটির নামকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোরদাবি করছি।”
মাহফুজুর রহমান বীর প্রতীক এর কথা জানতে চাইলে যুদ্ধকালীন সময়ে তৎকালীন ঢাকা দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলীয় ২২ থানা কমান্ড সংগঠনের এডিশনাল ডেপুটি কমান্ডার ও বয়ড়া ইউনিয়নের প্রাক্তণ চেয়ারম্যান প্রবীন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আওলাদ হোসেন স্মৃতি চারণে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “মাহফুজ আমাদের হরিরামপুরের গর্ব। দুঃসাহসিক একজন সম্মুখ মুক্তিযোদ্ধা। এই দেশের জন্য যিনি জীবন বির্সজন দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত হরিরামপুরে তাঁর স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়নি। তাই আমি অনুরোধ করব, এই মাহফুজের স্মরণে হরিরামপুরে এমন একটা কিছু করা হোক, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁর অবদানের কথা জানতে পারে।”
এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, “হরিরামপুরের বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত এমন একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে আমার জানাই ছিল না। হরিরামপুরের জন্য অবশ্যই এটা অত্যন্ত গর্ব ও অহংকারের। বিশেষ করে হরিরামপুরের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই বীর প্রতীক মাহফুজুর রহমান খান সম্পর্কে জানার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরও উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।”