হরিরামপুরে অনিয়মের অভিযোগে ভোট পুনঃগণনার দাবি একাধিক চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী

জ.ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে :

৫ম ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে ভোট গণনা সঠিক না হওয়া ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছেন। জানা যায় এ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩জন প্রার্থী ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তার নিকট দিয়েছেন অনুলিপি।

৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট পুনঃগণনার আবেদন করেছেন, ১নং বাল্লা ইউনিয়নের বিএনপি পন্থি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী রেজা (প্রতীক চশমা), ৩নং চালা ইউনিয়নের সরকার দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র রার্নিং চেয়ারম্যান শামছুল আলম বিশ্বাস (প্রতীক ঢোল), ৭নং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে ক্ষমতাসীনস আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. ইদ্রিস লাভলু ও ৮নং গোপীনাথপুর ইউনিয়নে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী সোহরাব আলী আকন্দ। এছাড়াও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী মো. মোজাফ্ফার মোল্লা (প্রতীক ফুটবল), বয়ড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী মো. মোজাফফর হোসেন (প্রতীক ফুটবল) এবং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. তুহিন বিশ্বাস (প্রতীক মোরগ)।

প্রার্থীদের লিখিত আবেদনসূত্রে জানা যায়, বাল্লা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী রেজা (চশমা প্রতীক) ৭নং পোদ্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮নং ঝিটকা আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে তাঁর পোলিং এজেন্টদেরকে ভিতরে একপাশে দাড় করিয়ে রেখে ভোট গণনার পূর্বে ফলাফল শীটে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর এজেন্টরা ব্যালট পেপার দেখতে চাইলে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। তাঁর চশমা মার্কার ব্যালট পেপার নৌকা মার্কার ব্যালটের বান্ডিলের ভেতরে ঢুকিয়ে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাই, ৭ ও ৮নং কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনার দাবি জানান রার্নিং এ চেয়ারম্যান।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী মো. ইদ্রিস লাভলু ইউনিয়নের সকল কেন্দ্রের ভোট পুনঃ গণনার দাবি জানিয়েছেন। তার অভিযোগ, সকল কেন্দ্রেরই ভোট গণনা সঠিক হয়নি।

গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গণনা সঠিক হয়নি উল্লেখ করে ওই কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহরাব আলী আকন্দ।

চালা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শামছুল আলম বিশ্বাস (প্রতীক ঢোল) কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট পুনঃ গণনার আবেদন করেছেন। ওই কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ১৪৬ ভোট এবং নৌকার প্রার্থী কাজী আব্দুল মজিদ পেয়েছেন ১৪৬৮ ভোট। যা ‘‘কোনোভাবেই সম্ভব নয়’’ বলে তিনি আবেদনেউল্লেখ করে পুণঃভোট গণনার জোর দাবি জানান।

সাধারণ সদস্য পদে ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়ে বয়ড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. মোজাফফর হোসেন (প্রতীক ফুটবল) আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ১নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র এম. এ. রাজ্জাক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ শেষে গণনার সময় তাঁর ভোট ১৮২ এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী মো. রকিবুল হাসান (সুইম) এর (প্রতীক তালা) ভোটও ১৮২ হয়। ১ম তিনবার গণনায় দুইজনের ভোট সমান হলেও ৪র্থ বার ভোট গণনা করে প্রিজাইডিং অফিসার তাঁর ৫টি এবং প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী সুইমের ৩টি ভোট বাতিল করে গোপনে তালা প্রতীককে ২ ভোট বেশি দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ফলাফল শীটে তার পোলিং এজেন্টের কোনো স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি এবং তাকে ফলাফলের কপিও দেওয়া হয়নি বরে অভিযোগ তুলে ভোট পুণঃগণনার জন্য আবেদন করেন ।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. মোজাফ্ফার মোল্লা (প্রতীক ফুটবল) ভোট পুনঃগণনার আবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘‘৪নং ওয়ার্ডের নির্বাচনী কেন্দ্র ২৬নং মানিকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ শেষে তাঁর ভোট ৫০০টি এবং প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী মো. সোনামদ্দিন মোল্লা (প্রতীক টিউবওয়েল) ৫২০টি গণনা করা হয়। ১২৯টি ভোট বাতিল বলে তাঁর পোলিং এজেন্ট মো. আলাউদ্দিনকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু তার এজেন্টের স্বাক্ষর পূর্বে নেওয়া হয়েছে। তাঁর পোলিং এজেন্ট আলাউদ্দিন প্রিজাইডিং অফিসারকে পুনরায় ভোট গণনার জন্য অনুরোধ করলে তার কথা না শুনে প্রিজাইডিং অফিসার তাড়াহুড়ো করে চলে যায় এবং বলে তাঁর দ্বারা পুনরায় ভোট গণনা করা সম্ভব নয়। প্রিজাইডিং অফিসার অনুপস্থিত ভোটার সংখ্যা অংকে ৫৪৪টি এবং কথায় পাঁচশত চুরাশি লিখেছে।”

৬নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. তুহিন বিশ্বাস (প্রতীক মোরগ) ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, ভোটগ্রহণ শেষে ১ম তিনবার তাঁর ভোট ৩৫৫ এবং প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী মো. কুদ্দুস আলী বেপারীর (প্রতীক তালা) ভোট ৩৫৪ গণনা করা হয়। ৪র্থ বার গণনার সময় তাঁর ব্যালটের ভাগ থেকে ৬টি ব্যালট কুদ্দুস আলী বেপারীর ভাগে দিয়ে কুদ্দুস আলী বেপারীকে ৬ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারকে পুনরায় ভোট গণনার অনুরোধ জানালেও প্রিজাইডিং অফিসার তা শোনেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *