জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর উজানপাড়া গ্রামে নিয়মিত অবৈধভাবে তৈরি করছেবচোলাই মদ। এলাকার কিশোর-যুবকসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের কাছে তা বিক্রিও হচ্ছে। ওই গ্রামেরই একটি চক্র নিয়মিত এই তৈরি করে তা অবাধে বিক্রি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসী তাদের কয়েকবার বাঁধা দিলেও তা উপেক্ষা করে এমন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সম্প্রতি সেই চক্রের সদস্যরা স্থানীয় ইউপি সদস্যকে হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করলে জানা যায়, গোপীনাথপুর উজানপাড়া গ্রামের আটজনের একটি চক্র এই চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রির সাথে জড়িত। এরা সবাই পেশায় রাজমিস্ত্রী ও কাঠমিস্ত্রী। আটজনের মধ্যে চারজন বাড়িতে মদ তৈরি করেন। বাকি চারজন তাদের কাছে থেকে নিয়ে এলাকার বিভিন্ন বয়সী লোকজনের কাছে বিক্রি ও সরবরাহ সহ নিজেরাও পান করেন।
১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক স্থানীয়রা জানান, গত ৭ অক্টোবর (শুক্রবার) রাত ৮টার দিকে উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত হরলাল হালদারের ছেলে শ্যামল হালদারকে ১ লিটার চোলাই মদসহ উজানপাড়া গ্রামের নাসির খানের বাড়িতে আটক করে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও স্থানীয়রা। তারা শ্যামলকে জিজ্ঞেস করলে শ্যামল জানায়, সে উজানপাড়া গ্রামেরই আরশেদ আলীর ছেলে বাবলু মিয়ার কাছে থেকে এই চোলাই মদ ক্রয় করেছেন।
পরে ২নং ওয়ার্ডের সদস্য দেলোয়ার হোসেন গাজী থানা পুলিশকে জানালে রাত প্রায় ১২টার দিকে ফোর্সসহ এসআই তোফায়েল ঘটনাস্থলে যান। তিনি যাওয়ার আগেই শ্যামল কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এসআই তোফায়েল ১ লিটার মদ জব্দ করেন। তখন পুলিশের কাছে শ্যামল কুমার হালদার এবং বাবলুর বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যসহ স্থানীয়দের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনার পর অনুসন্ধানে গেলে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম এবং নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, উজানপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে লাবলু (৪০), আরশেদ আলীর ছেলে বাবলু মিয়া (৩৫), ছনো ফকিরের ছেলে রুবেল (৩০), মজিদ খানের ছেলে মাইনুদ্দিন (৩২), দানেজ খানের ছেলে মানিক খান (২৭), আনছের আলীর ছেলে আলী (২৮), জলিল ওরফে বয়ড়া ঘটুর ছেলে মাছেম (৩৩), হাসেমের ছেলে সেন্টু (৩৭) দীর্ঘদিন যাবত এরা সংঘবদ্ধ হয়ে এই চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রি করে আসছে। এরা সবাই পেশায় রাজমিস্ত্রী ও কাঠমিস্ত্রী। এদের মধ্যে লাবলু, মানিক খান, মাইনুদ্দিন ও রুবেল-চারজন মিলে লাবলুর বাড়িতে মদ তৈরি করে। বাকি চারজন তাদের কাছে থেকে মদ কিনে গোপনে এলাকার বিভিন্ন লোকজনের বিক্রি করে। সারাবছর উৎপাদন ও বিক্রি কম থাকলেও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায় বলে এলাকাবাসী জানান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আটজনের সাথে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে মুঠোফোনে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রুবেল সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি কলটি কেটে দিয়ে মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। মাইনুদ্দিন বলেন, “আমরা আগে শখ করে বন্ধুরা মিলে মদ বানাইছি ও খাইছি। এখন আমি এ সবের সাথে জড়িত নই। তবে বাকিরা করলে করতে পারে।”
আলী মুঠোফোনে বলেন, “দেড় বছর আগে আমি মাস তিনেক এই মদ খাইতাম। তখন রুবেলের কাছে থেকে নিতাম। এখন আমি খাইনা। তবে মাইনুদ্দিন, মানিক, বাবলু ও রুবেল এরা এ কাজের সাথে জড়িত।” মাছেম বলেন, ” আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমি এসবের সাথে জড়িত নই” বলেই দ্রুত ফোনটি কেটে দেন।”
লাবলু জানান, “ওই দিন আমি বাড়ি ছিলাম না। আমার বাড়ি রাতে মানিককে থাকতে বলছিলাম বাড়ি পাহাড়া দেয়ার জন্য। মানিক আমার বাড়ি থেকে রাতে ওই জিনিস বানাইছে। তবে আমি এ ব্যাপারে কিছু জানিনা এবং আমি জড়িতও নই।”
ক্রেতা শ্যামল হালদার জানান, “ঘটনাটি সত্য। থানা পুলিশ এসে মিমাংসা করেছে। এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নাই।”
১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “গত ৭ আগষ্ট (শুক্রবার) আমি ও গ্রামবাসী মিলে ১ লিটার মদসহ শ্যামলকে আটক করি। শ্যামল জানায়, সে বাবলুর কাছে থেকে এ চোলাই মদ কিনেছে।পরবর্তীতে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে পুলিশ গিয়ে মদ জব্দ করে এবং আমরা একটি লিখিত অভিযোগও দেই। তবে তার আগেই ফোনে কথা বলার ভনিতা করে শ্যামল দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার সাথে জড়িত মানিক খান আমাকে দেখে নিবে বলে হুমকিও দেয়।”
ওই গ্রামেরই বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিলন বিশ্বাস বলেন, “দীর্ঘদিন যাবত এই সংঘবদ্ধ চক্রটি গোপনে মদ উৎপাদন ও বিক্রি করে আসছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই, প্রশাসন যেন মদ উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে এলাকার যুবসমাজকে মাদকের কড়াল গ্রাস থেকে রক্ষা করে।”
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন লাভলু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, “ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং থানা পুলিশ এক লিটার মদ জব্দও করেছে । পরে আমার সাথে আর কেউ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেনি। তাই আমি আর ব্যবস্থা নিতে পারিনি।”
হরিরামপুর থানার এসআই তোফায়েল বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে এক লিটার মদ জব্দ করি। তবে আটককৃত শ্যামল পালিয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম জানান, “তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”