I
জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে :
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর মজমপাড়া গ্রামে গৃহকর্মী (কাজের বুয়া) ঠিক করার ঘটনাকে কেন্দ্র সালমা বেগম (৪৫) নামের এক মহিলাকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে।
গত ৩ নভেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ওই মহিলার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সালমা বেগম গোপীনাথপুর মজমপাড়া গ্রামের রাজা মিয়ার স্ত্রী। ঘটনার দিন রাতেই গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হরিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় বুধবার রাতেই সালমা বেগমের ছোট ছেলে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একই গ্রামের রিপন তালুকদারের বিরুদ্ধে হরিরামপুর থানায় অভিযোগ করেন। রিপন তালুকদার একই গ্রামের আবুল খায়েদ তালুকদার।
অভিযোগকারীর পারিবারিক ও অভিযোগপত্রের সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেল ৪ টার দিকে আনোয়ার হোসেন নামের এক জনৈক ব্যক্তি আমাদের বাড়ি আসেন। আমার মাকে তিনি জানান, আমার বাড়িতে একজন গৃহকর্মী লাগবে। আপনি অথবা আপনার মেয়ে কি আমার বাড়িতে কাজের মহিলা হিসেবে কাজ করবেন কিনা? তখন আমার মা জনৈক ব্যক্তিকে জানান, আমরা তো কাজের মহিলা নই।
আপনি কেন আমার বাড়িতে এসেছেন? আপনাকে আমার বাড়িতে কে আসতে বলেছে? তখন জনৈক ব্যক্তি জানান, রিপন তালুকদার আপনাদের বাড়ি পাঠিয়েছে, একথা বলে তিনি চলে যান। ওই সময় আমার মা ঘটনাটি জানার জন্য রিপন তালুকদারের বাড়ি যান এবং তাকে বাড়ি না পেয়ে রিপনের স্ত্রীর কাছে জানতে চান আনোয়ার হোসেন নামের ব্যক্তিকে আমার বাড়ি পাঠিয়েছে কেন? পরবর্তীতে আমার মা বাড়ি চলে আসে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে রিপন তালুকদার আমাদের অনুপস্থিতিতে আমাদের বাড়ি এসে আমার মা এবং বোনকে এলোপাতাড়িভাবে কিল-ঘুষি ও হাতে ধারালো অস্ত্র প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে মাথায় ৪/৫ টা কোপ দেয়।রক্তাক্ত অবস্থায় আমার মা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
আমার বোনের চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে আসে এবং আমার বোন ও মাকে উদ্ধার করে ওই সময়ই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি এবং চিকিৎসকরা আমার মাকে ভর্তি করে নেন।” এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মোস্তফা মনির জানান, সালমা বেগম নামের এক রোগী বুধবার রাতে ভর্তি নেয়া হয়েছে। তার মাথায় দুটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং সেলাই করে তাকে ভর্তি করে বেডে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে সরেজমিনে গেলে সালমা বেগমের মেয়ে পারভিন সুলতানা রাজিয়া জানান, আমি গার্মেন্টসে চাকুরি করতাম। চাকুরি ছেড়ে একেবারে গ্রামে ফিরে আসি। বুধবার বিকেলে আমাদের বাড়ি হরিরামপুরের সাংবাদিক আনোয়ার চৌধুরী আমাদের বাড়ি যায় এবং তার বাড়িতে গৃহকর্মীর জন্য বলে। আমরা তাকে না করে দেই। তিনি জানান উনাকে নাকি রিপন তালুকদার পাঠিয়ছে। পরে তিনি চলে যান। এ নিয়েই রিপন সন্ধ্যার পরে এসে আমার মাকে আঘাত করে। আমাকেও মুখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। এ ব্যাপারে প্রবীণ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, রিপন পুলিশের এবং সাংবাদিকদের সোর্স হিসেবে কাজ করে। এই সূত্র ধরেই আমি রিপনকে চিনি। আমার বাসার জন্য একজন কাজের লোক চেয়েছিলাম রিপনের কাছে। সে সালমা বেগমের মেয়ের কথা বলায় আমি সেখানে যাই। যাওয়ার পরে শুনলাম তারা গৃহকর্মীর কাজ করে না। ফলে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে আসি। এরপর কি হয়েছে আমি জানিনা।” রিপন তালুকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি থানা এবং সাংবাদিকদের সোর্স হিসেবে কাজ করি বলে আমার অনেক শত্রু আছে। আনোয়ার চৌধুরী আমার কাছে কাজের লোক চেয়েছিলেন এটা সত্য। তবে উনার ড্রাইভার দুলাল সন্ধান দিছে, আমি না। তবে সালমা বেগমের বাড়ির সন্ধান আমি দেইনি। তবে সালমা বেগমের সাথে এ ব্যাপারে আমার কথা কাটাকাটি ও দস্তাদস্তি হয় এবং আমার হাতের আংটিতে সালমার মাথায় ক্ষত হয়।
” এ ব্যাপারে, ইজিবাইক ড্রাইভার দুলাল বলেন, বুধবার আমি সাংবাদিক আনোয়ার চৌধুরীরকে নিয়ে কুশিয়ারচর কালিতলা যাই। সেখান থেকে ফেরার পথে কুটির বাজারে রিপনের সাথে দেখা হলে রিপন সাংবাদিক আনোয়ার চৌধুরীকে সালমার বাড়ির কথা বললে আমি নিয়ে যাই। এ ব্যাপারে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”