
জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে :
আসন্ন ইদুল আযহাকে সামনে রেখে এ বছর মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুর সন্ধান মিলেছে উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ইছাইল গ্রামে মো. জাকির হোসেনের খামারে। শখ করে গরুটির নাম রাখা হয়েছে সম্রাট। সাদা কালো রঙের মিশ্রণের এই সম্রাটের ওজন আনুমানিক প্রায় ১২ শো কেজি। দাম চাওয়া হচ্ছে ১২ লক্ষ টাকা।
জানা যায়, ইছাইল গ্রামের হামেদ আলী ছেলে জাকির হোসেন। সে পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। স্বল্প আয়ের সংসারে কাঠ মিস্ত্রী কাজের পাশাপাশি করেছেন ছোট পরিসরের একটি গরুর খামার। তার খামারে রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে মাত্র ৪টি গরু। শখের বশবর্তীর সাথে বেশি আয়ের আশায় পাশের গ্রাম থেকেই ২০ মাস আগে তিনি কিনেছিলেন একটা ফিজিয়ান জাতের ষাঁড়ের বাছুর। আর তখনই আদর করে শখের বশে এর নাম রাখা হয়েছিল সম্রাট ।
সম্রাটের বর্তমান বয়স ৩৬ মাস। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাদা কালো রঙের মিশ্রণে বিশালাকার এই সম্রাটকে এক নজর দেখতে প্রতিবেশিসহ পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকেও লোকজন ছুটে এসেছে। প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের এমন ভিড় জমে এমনটিই জানান এলাকাবাসী। জানা যায়, ২০ মাস বয়সে তাকে ঘর থেকে বের করা হয় মাত্র ২বার। সম্রাটের রাখার ঘরে লাগানো হয়েছে বৈদ্যুতিক পাখা। ঘরের ভেতর রেখেই মোটরের সাহায্যে তাকে গোসল করানো হয়। গরমের তাপমাত্রা অনুযায়ী দিনে ৩/৪ বারও গোসল করানো হয় বলে জানান খামারী। সোয়াবিনের খৈল, খেসারী, মুগ ও গমের ছাল, ধানের গুড়া ও সতেজ ঘাস খাওয়ানো হয় এই সম্রাটকে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, এই সম্রাটই এবছর ইদুল আযহায় এ উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু। প্রতিবেশি আব্দুল করিম জানান, “জাকির গরুটা খুব কষ্ট করে পালছে। গরুটা পালায় ওর খুব কষ্ট হয়েছে। এখন জাকির যেন ন্যায্য মূল্য পায় এটাই আমরা কামনা করি।” পাশের গ্রামের বজলুল হক জানান, “আমি নিয়মিত বাড়িতে থাকি না। ঢাকায় থাকি। তবে বাড়ি এসে শুনলাম জাকিরের নাকি অনেক বড় একটা গরু আছে। তাই দেখতে এসেছি। জাকির গরীব মানুষ। শখ করে গরুটা লালন পালন করেছে। গরুটা যেন ভাল একটা মুল্য সে পায়। কারণ গরীব মানুষ একটা আশা নিয়ে কষ্ট করেই তো একটা পশু লালন পালন করেন।” বাল্লা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, “আমি মাঝে মাঝেই এসে গরুটাকে দেখা শোনা করেছি। জাকির খুব গরীব মানুষ। দিন মজুরের কাজ করে। অনেক কষ্ট করে ওর স্ত্রী আর সন্তানেরা এটাকে লালন পালন করেছে। কোনো প্রকার অখাদ্য বা ঔষধ জাতীয় কোনো খাবার খাওয়াই নাই। এখন জাকির যেন সুষ্ঠ ভাল একটা দাম পায়, যেন ভবিষ্যতে এ রকম গরু সে পালন করতে পারে।” খামারি জাকিরের স্ত্রী চায়না বেগম জানান, “এই গরুটা আমি আর আমার ছেলে দেখাশোনা করে এতো বড় করেছি। বলতে গেলে এটাকে আমি আমার সন্তানের মতোই যত্ব করে লালন পালন করেছি। আমরা চাই ভাল সম্মানজনক একটা দামে গরুটাকে যেন বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে পারি।” খামারি জাকির হোসেন বলেন, “সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত খাদ্য খাবার দিয়ে গরুটাকে এতো বড় করেছি। এই গরুর খাবারের পেছনে যে খরচ হয়, তা আমি আর যোগান দিতে পারছি না। আমি গরীব মানুষ এতো টাকা কই পামু। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি গরুটা আমি বিক্রি করব। তবে আমি আশায় আছি বাড়ি থেকে যেন গরুটা বিক্রি করতে পারি। এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।” এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জহিরুল ইসলাম জানান, “আমি জাকিরের গরুর কথা শুনেছি এবং আমার অফিসের এলএফ এ মাধব হালদারকে পাঠিয়ে গরুটির খোঁজখবর নিয়েছি। আসলে আমাদের অফিস থেকে পরামর্শের বাইরে লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”