জ.ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান ও তাঁর স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা শুভ্রা রায়ের বিরুদ্ধে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আবরার ফুয়াদ সামিউলের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ করেন অভিভাবক পাপিয়া সুলতানা ও একই বিদ্যালয়েরই পরিচালনা পর্ষদের বিদোৎশাহী সদস্য ইমদাদুল হক ওই শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের সাথে চরম র্দুব্যবহারসহ নানা বিষয়ের ওপর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি ডদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ (২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার) বেলা সাড়ে ১২ টায় তদন্তের সময় নির্ধারণ করে অভিযোগকারীদের চিঠি দেয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে আজ (২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার) দুপুরে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হতেই ওই সময় অসুস্থতার দাবি করেন প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান। তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের নিকট ওই সময় হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল সার্টিফিকেট পেশ করেন। তার ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত কমিটি তদন্ত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তদন্ত কার্যক্রমের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আব্দুর রব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও হারুকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চুন্নু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. মনির মোল্লা, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পিয়াস চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু চৌধুরী, বয়ড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি টিপু দেওয়ান।
তদন্ত কার্যক্রমের সময় দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আব্দুর রব জানান, মূলত প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান অসুস্থ। তার অসুস্থতার জন্য মানবিক কারণে যেন তদন্তের তারিখটা পরিবর্তন করে পুনরায় নির্ধারণ করা হয়, এটা নিয়েই আলোচনা করতে ওখানে আনাদের যাওয়া। এছাড়া অন্য কোনো কিছু নয়।”
হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সকাল ১১ টার দিকে প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান হাসপাতালে যান এবং মেডিকেল অফিসারের পরামর্শে তিনি ওই সময় ইসিজি করেন এবং মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, “আমি অসুস্থ হয়ে সকালে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। বিকেলে আবার মানিকগঞ্জ যাব হার্টের ডাক্তার দেখাতে। এ জন্য তদন্ত কমিটির কাছে আমি সময় চেয়েছি, পরবর্তীতে তদন্তের নতুন সময় নির্ধারণের জন্য।” “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্র চলছে” বলেও তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার জানান, দুপুরে তদন্ত কার্যক্রমের সময় প্রধান শিক্ষক অসুস্থতার সনদপত্র প্রদান করেন। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় অভিযোগকারীদের সাথে আলোচনা করে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে আবার নতুন করে সময় নির্ধারণ করা হবে।
তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে নতুন সময় নির্ধারণের ব্যাপারে অভিযোগকারী ইমদাদুল হক লিখিতভাবে সম্মতি দিলেও অন্য অভিযোগকারী পাপিয়া সুলতানা জানান, “তদন্তের পরিবেশটা ভাল না লাগায় আমি সঙ্কিত হয়ে আগেই চলে আসছি।”
উল্লেখ্য গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ পাপিয়া সুলতানা ও ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যোৎশাহী সদস্য ইমদাদুল হক বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা শুভ্রা রায়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় উপ-পরিচালক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন।