স্টাফ রিপোর্টার :
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক শুভ্রা রায়ের বিরুদ্ধে তিন জন অভিভাবক উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। গত ২৬ অক্টোবর অভিযোগটি করেন বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রীর অভিভাবক রূপা আক্তার, ফাতেমা আক্তার ও মোসা. কনক।
তাদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বাবুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। ওই অভিযোগে অভিযোগকারী হিসেবে ওই ৩ জন অভিভাবকের নাম ব্যবহার করা হয়। ওই অভিযোগের সাথে বিদ্যালয়ের সমাবেশের একটি ছবি সংযুক্ত করা হয়। যা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শুভ্রা রায় তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ধারণ করে এবং ফেসবুক পেজে তিনিই পোস্ট করেন। ওই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রকাশের পূর্বে ওই অভিযোগকারীদের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি এমনকি তাদের বক্তব্যও নেয়া হয়নি। সমাবেশের ছবি তোলা ও ওই ছবি ফেসবুক পেজে প্রকাশ এবং পরবর্তীতে ওই ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগ দায় এবং নিউজ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনা বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে, এ ঘটনার সাথে প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক শুভ্রা রায় জড়িত।
এছাড়াও অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, শুভ্রা রায় তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে দলাদলি সৃষ্টি করা সহ বিভিন্ন ধরনের বেআইনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। তারা নিজেদের অপকর্ম আড়াল ও নিরাপদ করতে এ সব কাজে বিভিন্নভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছেন। শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়ে তাদের সাজানো কথা বলিয়ে তা নিজেদের মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখেন। এতে শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে এবং শিক্ষক সম্পর্কে দিন দিন তাদের মনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে ওই শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান তারা।
অপর দিকে রূপা আক্তার নামে এক অভিভাবক আন্ধারমানিক মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান এর বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এককভাবে আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান তার শিশু কন্যা সন্তানের সাথে খারাপ আচরণ করেন। সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বাবুর বিরুদ্ধে তাকে বাদী বানিয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন এবং আবুল কালাম আজাদ বাবুর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। তার কথা মতো মিথ্যা সাক্ষী না দেয়ায় ওই অভিভাবকের সাথে খারাপ আচরণ করে আসছেন। গত ৯ অক্টোবর দুপুরে ওই অভিভাবক তার সন্তানের টিফিন নিয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান তার সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং বলেন তোমার সাথে আমার কথা আছে, তুমি আমার বাড়িতে এসো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ফোন করে কথা আছে বলেও বাড়িতে যেতে বলেন প্রধান শিক্ষক। কি উদ্দেশ্যে ওই অভিভাবককে বাড়ি যেতে বলেন এবং কেন খারাপ আচরণ করেন তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
এ ব্যপারে অভিযোগকারীদের সাথে যোগাযোগ করলে অভিভাবক রূপা আক্তার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আমার নাম ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। যা আমরা জানিনা। এমনকি আমার সন্তানের সাথেও খারাপ আচরণ করে। তারা স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও ভেদাভেদ করে তুলছে। আমরা এর সঠিক বিচার দাবি করছি।”
ফাতেমা আক্তার জানান, “আমাদের নাম এবং স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বাবু স্যারের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়, আমরা ওই অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি করছি।”
মোসাৎ কনক জানান, “আমাদের নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বাবু স্যারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, আমরা এতে স্বাক্ষর করিনি। বাবু স্যার একজন ভাল মানুষ। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির দাবি করছি।”
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, “অভিভাবকদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের অভিযোগ যদি প্রমাণ করতে না পারে, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, “ওই বিদ্যালয় নিয়ে আগের কয়েকটি অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করছেন। পরের অভিযোগগুলোও তাকে দেওয়া হয়েছে। সবগুলো অভিযোগ একীভূত করে তদন্ত করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান জানান, “অভিযোগের কপি পেয়েছি। শিক্ষা কমিটির সভা ডেকেছি। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *