জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে :

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে বিভিন্ন অঞ্চলের বিস্তৃত ফসলের মাঠ জুড়ে সরিষার ফুলে ফুলে হলুদাভ হয়ে উঠেছে। এতে গ্রামীণ পটভূমিতে মনোমগ্ধকর এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয়েছে। এর ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শহরাঞ্চলসহ উপজেলার আশপাশ থেকে কর্মব্যস্ত মানুষগুলো সাময়িক ক্লান্তি দূর করতে ছুটে আসেন সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

জানা যায়, কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কৃষকেরা এই সরিষার বীজ বপন করে থাকেন। ডিসেম্বর মাসের বিদায় লগ্ন থেকে শুরু করে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহে একাকার হয়ে যায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মাঠ ঘাট। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ফসলের মাঠের দিকে যতদূর চোখ যায়, মাঠ জুড়ে কেবল দেখা যায় শুধুই হলুদ আর হলুদ রঙ।
দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঠ যেন সরিষা ফুলে ফুলে আবৃত হয়ে ওঠে। প্রকৃতির এলোমেলো নির্মল বাতাসে ভেসে বেড়ায় মাতাল করা মধুর ঘ্রাণ। এ সময় মৌমাছিরাও গুন গুন শব্দে মনের আনন্দে গান গেয়ে দলে দলে ছুটে আসে মধু আহরণে। আর এই নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর মুহূর্তে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ ছুটে আসেন সরিষার হলুদ ফুলের ঘ্রাণ নিতে। প্রকৃতি প্রেমীরাও নিজেদের ক্যামেরাবন্দি করতে ছুটছেন সরিষার ফুলে ভরা ফসলের মাঠের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। ফুলের হলুদ রঙে নয়নাভিরাম দৃশ্য আর গন্ধে মাতোয়ারা হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শোভা পাচ্ছে হলুদ রঙের দৃষ্টিনন্দন ছবি। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা হলুদ ফুলের রাজ্যগুলো মুখরিত দর্শনার্থীদের পদচারণায়।

উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের নাসির জানান, “আমি ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। কিন্তু জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টিতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। ওই সময় বৃষ্টি না হলে অনেক ভাল ফলন হতো।”

একই গ্রামের রশিদ মোল্লা জানান, “২বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছিল। কিন্তু চারা গজাতেই অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যা হইছে তাতে খারাপ না।”

উপজেলার কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, চলতি মৌসুমে সরিষার টরি-৭, বারি-৪, ৯, ১৪ ও ১৭ এই ৫ টি জাতের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩৫২০ হে. জমি। এছাড়াও বারি-১৮ জাতের সরিষা চাষ হয়েছে প্রায় ১ হাজার বিঘা জমিতে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অতিবৃষ্টির কারণে আবাদ হয় প্রায় ৩৪৭০ হে. জমি। তাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪৭৫২ মে. টন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গফফার মুঠোফোনে জানান, “উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ফসলের মাঠে নজর পরতেই সরিষা ফুলের হলুদ রঙে চোখ জুড়িয়ে যায়। আশা করছি, এ মৌসুমে ফলন ভাল হবে। তবে শুরুতেই জাওয়াদের প্রভাবে তিন দিন বৃষ্টি হওয়ায় সরিষা গাছের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তা না হলে আরও ভাল ফলন হতো এবং আমাদের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন হতো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *