হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) থেকে :
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে ঠেকাতে তিনদিন যাবৎ অনশন করে আসছেন বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা উজানপাড়া এলাকার এক গৃহবধূ। ওই গৃহবধূর স্বামী রহম আলী দেওয়ান (৫০)। সে ওই গ্রামের মৃত আব্দুল আলী দেওয়ানের ছোট ছেলে। ভুক্তভোগী নারী শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের মুন্নাফ সরদারের মেয়ে। সংসার জীবনে রহম আলী দেওয়ান তিন কন্যা সন্তানের জনক । বড় দুই মেয়ের বিয়ে হলেও ছোট মেয়ে বর্তমান ভাদিয়াখোলা ফিরোজা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পারিবারিক কোলহের জের ধরে গত ২০ এপ্রিল ২০২১ তারিখে গোপনে এককভাবে স্ত্রীকে তালাক দেন রহম আলী দেওয়ান। তালাকের কপি ওই গৃহবধূর হাতে পৌঁছালে তালাকের বিষয়টি জানাজানি হয় এবং এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে আইনগতভাবে তালাকটি সম্পন্ন না হওয়ায় গত ৬ মে ২০২১ ইং তারিখে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালাক নোটিশ পাঠায় স্বামী রহম আলী। কিন্তু তালাক নোটিশটি গ্রহণ না করে ওই গৃহবধূ এলাকার লোকজনকে বিষয়টি মিমাংসার জন্য অবহিত করে। কিন্তু বিভিন্নভাবে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করলেও একটি মহলের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছে। এরই মধ্যে এলাকার কয়েকজন সমাজপতির প্ররোচনায় গত ১৭ জানুয়ারি (সোমবার) মধ্য রাতে একই গ্রামের পার্শ্ববর্তী পাড়ার আব্দুর রহিমের মেয়ের সাথে রহম আলীর দ্বিতীয় বিয়ের আয়োজন করলে সেখানে হাজির হন প্রথম স্ত্রী ওই গৃহবধূ। পরে বিয়ে পন্ড হলে ওই দিন রাতেই রহম আলীর বাড়ি অনশনে বসেন ওই গৃহবধূ। খবর পেয়ে গত ২০ জানুয়ারি (বুধবার) রাতে হরিরামপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তবে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই সমাজের কিছুলোক টালবাহানা করে চলছে। সমাজে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের কারণেই এখনও এই ঝামেলা সমাধান হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ জানান, “আমি আমার স্বামীর সংসার করতে চাই। আর্থিক বিষয় দেখিয়ে একতরফাভাবে আমাকে তালাক দিয়েছে। এলাকার কয়েকজন মাতবর বিষয়টি সমাধানে গরিমশি করছেন। মূলত তাদের কারণেই আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এখন তারা দ্বিতীয় বিয়ে করানোর জন্য আমার স্বামীর পেছনে লেগেছে। বিয়ের খবর পেয়েই আমি ওই বাড়িতে যাই। সেখানে সমাজের প্রভাবশালী আব্দুর রব, ইয়াকুব আলী, হাসমত আলীসহ আরও অনেকেই ছিল। তারাই আমার স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করানোর জন্য নিয়ে গেছে। আমি যাওয়ার পরে বিয়ে বন্ধ করে আমার স্বামীকে ফেলে তারা সবাই পালিয়ে যায়। পরে আমি আমার স্বামীর বাড়ি এসে বসি।”
ওই নারী আরও জানান, “আমার স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় আমার দুই মেয়ের জামাইদের পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি। যা আমার স্বামীকে তখন জানাইনি। এছাড়া কয়েক বছরে আমার মেয়েদের উচ্চ বিলাসী চাহিদা পূরণেও অনেক টাকা খরচ হয়। এ জন্যই টাকা পয়সার হিসেব নিয়ে আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি শুরু হতে থাকে। আর এটাকে পুঁজি করেই সমাজের গুটি কয়েক স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে আজ আমার এই দূরাবস্থা।”
একই বাড়িতে বসবাস করা রহম আলীর আপন চাচাতো বড় ভাই হারেজ দেওয়ানের স্ত্রী বিলকিস বেগম জানান, “মেয়েদের ভোগবিলাসিতার জন্যই আমার জা বেহিসাবি টাকা পয়সা খরচ করে। এটাকে কেন্দ্র করে এবং সমাজের কিছু কুচক্রী মানুষের কারণে আজ সে সংসার ছাড়া।”
শরিক বাড়ির প্রতিবেশি ইউনুস দেওয়ানের স্ত্রী কোহিনুর বলেন, “ওই গৃহবধূ তার মেয়েদের জন্যই তার স্বামীর টাকা খরচ করেছে। অথচ আজ মেয়েরা এখন তার মাকে দোষ দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, দুই মেয়ের জামাইয়ের পেছনেও অনেক টাকা খরচ করেছেন সে।”
প্রতিবেশি ফরমান আলী জানান, “টাকা পয়সা নিয়ে ওই গৃহবধূ ও স্বামীর সাথে ঝামেলা চলছে। রহম আলী দীর্ঘদিন বিদেশে ছিল। তার স্ত্রী নাকি স্বামীর টাকা নষ্ট করেছে। তবে মেয়েদের চলাফেরা ভাল ছিল না। মেয়েদের কারণেই তার এই দুরাবস্থা।”
এ বিষয়ে সমাজের মাতব্বর জাফর আলী জানান, “শিবালয় উপজেলায় ইউপি নির্বাচন। নির্বাচন শেষে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নির্বাচনের দুএকদিন পর এটা নিয়ে আমরা বসবো।”
এ বিষয়ে রহমত আলী দেওয়ান এর সাথে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম জানান, “অনশনের ঘটনার খবর পেয়ে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুতই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”