হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি :
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুটি অফিস কক্ষের তালা ভেঙ্গে চুরির চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৬ জানুয়ারি শুক্রবার দিবাগত মধ্য রাতে। এ ঘটনায় ঘটনার দুই দিন পর ৯ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইসরাত জাহান বাদী হয়ে হরিরামপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তি উল্লেখ করে অফিস কক্ষে চুরি করার চেষ্টার দায়ে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ৪৫৭/৩৮০/৫১১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন গভীর রাতে কে বা করা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচ তলায় ক্যাশিয়ার ও পরিসংখ্যান ২টি অফিস রুমের দরজার তালা লাগানোর কয়ড়া ভেঙে অফিস রুমে প্রবেশ করে। ক্যাশিয়ারের রুমের আলমারির তালা ভেঙে ড্রয়ার খুলে বাইরে বের করে রাখে। এছাড়াও রেজিষ্টার্ড খাতাসহ বিভিন্ন কাগজপত্র এলোমেলো ফেলে রেখে যায়। পরিসংখ্যান অফিস কক্ষের তালা ভেঙ্গে রুমে প্রবেশ করে ২টি আলমারী ভেঙে কাগজপত্র লন্ডভন্ড করে রুমের ভেতরের জানালার গ্রিক কেটে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। তবে কোনো জিনিসপত্র নেয়নি বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
আরও জানা যায়, ঘটনার পরেই সকালে অফিস স্টাফরা অফিসে এসে রুমের এ অবস্থা দেখে থানায় ফোন করলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন থানা পুলিশ। পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতেই স্টাফরা রুমে প্রবেশ করে। থানা পুলিশ পরিদর্শন শেষে একটি অভিযোগপত্র দায়ের জন্য পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ওই দিন শনিবার দিবাগত রাত ১২.৪৫ মিনিটে লিখিত আকারে থানাকে অবহিত করে একটি চিঠি আকারে ই-মেইল করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইসরাত জাহান। যা থানায় অভিযোগ আকারে গৃহিত হয়নি।
একটি বিশেষ সূত্রে জানা যায়, এ রকম চুরির ঘটনা ঘটতে পারে, এমনটি আগে থেকেই অবগত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইসরাত জাহান। এ কারণেই তার ব্যক্তিগত নথিপত্র আগেই অফিস থেকে বাসায় নিয়ে যান বলে তিনি ব্যক্ত করেন। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অফিসিয়াল একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি বলেও জানা যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ হাফিজুল ইসলাম জানান, “চুরির চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো কাগজপত্র হারানো যায়নি। ঘটনার পরেই সকালে পুলিশকে খরব দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনার দুই দিন পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে।
চুরির বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইসরাত জাহান এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি। তার সাথে এ প্রতিবেদকের দেখা হলেও তিনি কোনো কথা না বলেই দ্রুত অফিস থেকে বের হয়ে যান। পরে তাকে মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
মানিকগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী জানান, “চুরির চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে এমনটি আমাকে জানানো হয়েছে। ওই দিন সকালেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পরপরই তারা ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন। এ ব্যাপারে মামলাও করা হয়েছে। প্রকৃতি ঘটনা উদঘাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করছে।”
ঘটনার দুই দিন পরে কেন মামলা দায়ের করা হলো এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে অফিসিয়াল তদন্ত কমিটি কেন গঠন করা হলো না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “আমি যতদূর জানি, ঘটনার পরেই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উনি একটা অভিযোগপত্র থানায় মেইল করেছিলেন। কিন্তু মেইলে যে অভিযোগপত্র গ্রহণ যোগ্য নয়, এটা তার জানা ছিল না। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে পরামর্শ করে অভিযোগপত্র লেখার কারণেই একটু দেরি হয়েছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেহেতু তদন্ত করছে, এজন্যই অফিসিয়ালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে যদি আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মীর মুরাদ জানান, “তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজও আমরা সংগ্রহ করেছি। আশা করি আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারব।”
হরিরামপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম জানান, “তদন্ত কাজ চলছে। আশা করি খুব দ্রুতই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।”