নিজস্ব সংবাদদাতা, মানিকগঞ্জ (২ নভেম্বর)

২০২২ সালে অনুষ্ঠিত মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ঘোষিত অবৈধ ফলাফল বাতিল করে প্রকৃত বিজয়ী কে এম বজলুল হক খান (রিপন)-কে বিজয়ী ঘোষণার দাবীতে মানিকগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।

আজ শনিবার বেলা দেড়টায় মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘চশমা’ প্রতীকের প্রার্থী, সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী কে এম বজলুল হক খান।

তিনি বলেন, ‘আমি ২০২২ সালে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলাম। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। প্রতিপক্ষ গোলাম মহীউদ্দীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে আমাকে পরাজিত করতে বিভিন্ন ধরণের অপকৌশল প্রয়োগ এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য নগদ টাকা, চাঁদরসহ নানা ধরণের উপটৌকন এবং প্রকাশ্যে খাবার বিতরণ করেন। এ ছাড়া ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার করে প্রতি উপজেলায় প্রকাশ্যে দিবালোকে ভোটারদের একত্রিত করে জোরপূর্বক ভোট আদায় করেন। এ বিষয়ে আমি মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সকল কমিশনারবৃন্দের নিকট তাৎক্ষণিক আবেদন করি এবং বেসরকারিভাবে ঘোষিত অবৈধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে গোলাম মহীউদ্দীনের নাম বিজয়ী হিসাবে গেজেটভূক্ত না করার অনুরোধ করা হলেও গত ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর থেকে আমাকে নানান হুমকি ও হয়রানি মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমার প্রতীক ছিল ‘চশমা’ এবং প্রতিপক্ষের ছিল ‘আনারস’। বিগত ১৭/১০/২০২২ তারিখ সাতটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৯ টায় এবং সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভোটগ্রহণের শেষ সময় ছিল দুপুর ২ ঘটিকা। কিন্তু হরিরামপুর উপজেলা ভোটকেন্দ্রে প্রতিপক্ষের পূর্বপরিকল্পনা মাফিক কৌশলগত কারণে বিকেল ৪ ঘটিকা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করানো হয় এবং বেসরকারি ফলাফল ঘোষিত হয় বিকাল অনুমান ৫ ঘটিকায়।

তিনি বলেন, যে সব কেন্দ্রে প্রতিপক্ষ ব্যাপক অনিয়ম করিয়েছেন সে সব কেন্দ্রের মধ্যে শিবালয় উপজেলা ভোটকেন্দ্র অন্যতম। দরখাস্তকারীর বিজয় নিশ্চিত জেনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ গোলাম মহীউদ্দীনের বিজয়ের জন্য পূর্বপরিকল্পনা মাফিক শিবালয় উপজেলা ভোটকেন্দ্রের বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ/যান্ত্রিক গোলযোগ-বিভ্রাট সৃষ্টি করে জনৈক নারী ভোটারদের আঙুলের ছাপ মিল না হওয়া সত্বেও তার ভোট অপকৌশল অবলম্বনে গ্রহণ করা হয়। উক্ত ঘটনায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, শিবালয় উপজেলা ভোটকেন্দ্রে নিখুঁতভাবে ভোট কারচুপি করা হয়েছে। ভোট গণনার পূর্বেই প্রিজাইডিং অফিসার তার অধীনস্তদের গোলাম মহীউদ্দীনের পক্ষে ফলাফল ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করেন, যাতে তার উপর কোনো দায়ভার না বর্তায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উক্ত কেন্দ্রে আমার প্রাপ্ত ভোটকেই গোলাম মহীউদ্দীনের প্রাপ্ত ভোট বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আমি শিবালয় উপজেলা ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ফলাফলের প্রিন্ট কপি প্রাপ্ত হলে এবং বিজ্ঞ জেলা পরিষদ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ইভিএম এক্সপার্ট দ্বারা পরীক্ষিত হলে সঠিক ফলাফল বের হয়ে আসবে।’

তিনি আরও বলেন,‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল ভোটের দিন কোনো কেন্দ্রেই বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে না। কিন্তু প্রতিপক্ষ কর্তৃক ভোট কারচুপির অপর একাটি কেন্দ্র হইলো ঘিওর উপজেলা। সকাল থেকেই ঘিওর উপজেলা ভোটকেন্দ্রের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে কেন্দ্রটি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ/মনিটরিং এর বাইরে থাকে। এরপর তারা নির্বিঘ্নে ভোটারদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট আদাল করে নেন। উল্লেখ্য যে, আমি বিশ্বস্ত সূত্রে আগেই বিষয়টি অবগত হয়ে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার/কমিশনারবৃন্দ ও সচিব মহোদয়কে লিখিতভাবে অবহিত করি। এ ছাড়াও ফলাফল প্রকাশ করার সময় দরখাস্তকারীর প্রাপ্ত ভোটকে প্রতিপক্ষ গোলাম মহীউদ্দীনের  ভোট বলে প্রকাশ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *